(১১/০৭/২০২০)
গীতামৃত দিলেন স্বয়ং কৃষ্ণ ভগবান।
গীতা রূপ মন্ত্র সংসারে করলেন দান।।১
ধর্ম সম্বন্ধে অজ্ঞ বিভ্রান্ত হয়ে আছে যারা।
গীতা পড়ে হ’লে সচেতন বুঝবেন তারা।।২
নানাভাবে করছে পূজা-পাঠ সনাতন ধর্মে।
বহুপূজা প্রয়োজন নেই,সত্য জ্ঞান হবে যোগধর্মে।৩
অনেক শাস্ত্র আছে ধরায়, শ্রেষ্ঠ মাত্র গীতা।
বুঝেছি যেটুকু গুরু-সঙ্গে,গীতা-ই পরিত্রাতা।।৪
একসাধে সব সাধে, সব সেধে কিছু না পায়।
গাছের গোড়ায় দিলে জল,পৌঁছায় পাতায় পাতায়।
কর্ম, ভক্তি, যাগ আদি জ্ঞানের করে বর্ণন।
ভক্ত জনে অভয় বাণী সংসারে দিলেন নারায়ন।।৬
সর্বভূতে যেজন দেখবে অভিন্ন আমারে।
অভেদ রূপে আমিও সদা দেখবো তারে।।৭
পত্র,পুষ্প,ফল,জল দিয়ে যা কিছু পারো।
যতই সামান্য হোক মোরে অর্পণ কোরো।৮
শ্রদ্ধা প্রেমের ভিখারী আমি হাত পেতে থাকি।
শ্রদ্ধা যে করে তার অভাব আমি না রাখি।।৯
সর্ব ধর্ম ত্যাগ করে যে শরণে আসে আমার।
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি রক্ষা করবেন তোমার।।১০
শেষ সময়ে যে করে আমাকে স্মরণ।
অন্তিমে নিশ্চয় পাবে স্থান আমার চরণ।।১১.
স্বামী নিত্যানন্দ বলে,পড়বে রোজ গীতা খানি।
শোক মোহ দূর হবে এটা গীতার অভয় বাণী।।১২
হরি ওম্ তৎ সৎ হরি ওম্ তৎ সৎ হরি ওম্
(১২/০৭/২০২০/)
ভগবান বললেন, তত্ত্ব জ্ঞান লাভের তিনটি উপায়।
প্রণাম করে প্রশ্ন করো সন্তুষ্টকরবে গুরুকে সেবায়।।
একাগ্র করার কৌশল গুরু দেবেন করে ধারণা।
জানবে যোগাভ্যাস নিতান্তই গুরুমুখী সাধনা।।১
দুরন্ত তার স্বভাব, ভীষণ চঞ্চল মনের গতি।
প্রাণায়াম সাধনে স্বভাব হয় শান্ত মনের প্রকৃতি।।
গুরু থেকে শিখে করো অভ্যাস এ অমূল্য সম্পদ।
মনমুখী করলে জেনো বাড়বে নিশ্চয়ই বিপদ।।২
কিছু ক্রিয়া-কলাপ আছে গুপ্ত,গুরু দেবে তোমারে।
সে অভ্যাসে মনের শক্তিকে বাড়ায় সহস্রগুণ করে।।
যম, নিয়ম পালন করে নিজে হতে হবে অধিকারী।
মনকে বশ করতে আর করতে হবে না মারামারি।।৩
আপনা আপনি সকল কাজ হবে সফল।
কোন কাজেই তখন দেখবে, না হবে বিফল।।
গৃহকর্মে আসক্তি তার তখন থাকে না কিছু।
সদা আপন (আত্ম) ভাবে থাকে সাধনার পিছু।।৪
সংসার নিয়ে থাকে না চিন্তা ,না কোন পেশায়।
মন চায় সব সময় ডুবে থাকতে সাধনার নেশায়।।
সবাই জানে জন্ম- মৃত্যু দুটো কথা মাত্র সার।
সাধনা করে স্থিতি হলে প্রাণ,তখন মৃত্যু হবে কার?৫
জাগাও কুলকুণ্ডলিনী ভেদ করে নিজের মূলাধার।
তবে মেরুর মাঝে সুষুম্নাতে হবে প্রাণের সঞ্চার।।
নেশার ঘরে সুখের ভরে হবে তবে নির্বিকার।
তখন গুরু কৃপায় নিজে দেখতে পাবে শিবাকার।
(০৯/০৭/২০২০)
প্রেম ও ভক্তির অভাব,খারাপ হয়েছে স্বভাব।
হৃদয়ে সঞ্চার হয় যেন ভাব।।
থাকলে পূর্ণ বিশ্বাস দিচ্ছেন তিনি আশ্বাস,
যতক্ষণ আছে এ দেহে নিঃশ্বাস। ১
সে অপরকে কি করে করবে বিশ্বাস? ২
বিশ্বাস করা কেবল কারো মুখের কথা নয়,
ব্যবহার করার পর বিশ্বাস অবিশ্বাস হয়। ৩
কথা দিয়ে যারা রাখে না কথা,তারা ধোকেবাজ।
বেশিরভাগ লোক বিশ্বাস নষ্ট করে সমাজে আজ। ৪
সাধন বিনে কভু মিলে কি কখনো রতন,
গুরুতে বিশ্বাস হলে তবেই ঘুচবে বন্ধন।৫
ইন্দ্রিয়েরা কে কি বলে কান দিও না কখন,
থাকো আপন ভাবে আত্মায় করে সমর্পণ। ৬
দেহখাঁচা থাকে পড়ে, প্রাণ পাখি যায় উড়ে।
তখন আর এদেহের কেহ আদর না করে।। ৭
যতশীঘ্র সম্ভব ঘরের বাইরে নিয়ে যায় চলে,
সবাই মিলে নিয়ে যায় “বল হরি,হরিবোল” বলে।।৮
সারা জীবন মরলে খেটে বইতে সংসারের বোঝা,
জীবনের যে গুঢ় রহস্য তা আর হলো না বোঝা। ৯
গুরুর বাক্যে করো না অবিশ্বাস, ভুলো না রে মন।
শরণ যখন নিয়েছ,গুরুর বাক্য ভাব অনুক্ষণ।।১০
বিশ্বাস যদি থাকে গুরুর উপরজন্ম-মরণ না হবে।
স্বামী নিত্যানন্দ বলে, যমরাজ তোমায় না ছোঁবে।।
*শান্তি: শান্তি: শান্তি:ওম্*
(১০/০৭/২০২০)
শাস্ত্রে তো আছে,তা ছাড়াও বলেন মুনিঋষি।।
মনে আনতে হবে সদা প্রেম-ভক্তি-শ্রদ্ধা ভাব।
বিচার সৎসঙ্গে ও সাধনা হতে আসে এ সমভাব।।১
কর্তাভাব ছেড়ে কর্ম কর,নাভেবে লোকসান লাভ।।
কর্ম করতে গিয়েই করে লাভ-লোকসানের হিসাব।
সংকীর্ণতা ছেড়ে করলে কর্ম,সমাজে পড়ে প্রভাব।২
সঙ্গীতে বলে”ভেবে দেখ মন কেউ কারো নয়”।
ভাব সুন্দর হলে আবার সবাই তোমার হয়।
খাদ্য হতে গুণ, গুণ অনুসারে হয় সংস্কার ।।৩
দিনের পর দিন বলে,এটার পর এটা দরকার।
কোন পিতা-মাতা জাগায় না সন্তানে বৈরাগ্য ভাব।
শিক্ষার দ্বারা আসে, দয়া করুণা মৈত্রী সমভাব।।৪
এক লোহা থেকে তৈরি হয় কাস্তে কোদাল মই।।
এক চিনি থেকে তৈরি হয় কদম্ব বাতাসা মিছরি।
এক মাটি থেকে হয় দেব দেবী, শিব কালী তৈরি।।৫
ভাব কর্মানুসারে নারী দেবী হয়ে সমাজে পূজিতা।।
প্রতিদিন গীতা অধ্যয়ণে ,চলে যায় অহং ভাব।
বদলে যায় নিজের স্বভাব হৃদয় আসে ব্রহ্মভাব।।৬
শুদ্ধভাব হলে হয় মনে আনন্দ প্রসন্নতা সমভাব।।
মনে আসে প্রতিমুহূর্তে দ্বন্দ্ব,ভালো ও খারাপ ভাব।
মনে দুঃখ হয় ,সমভাব হলে থাকবেনা অভাব।।৭
জীবনে কখনও কোন কিছুরই তখন হয় না অভাব।
সংগ অনুসারে মনে আসে ভাব-সদ্ভাব- মহাভাব।
ইষ্ট দেবদেবীর সাথে একত্র হ’লে আসে মহাভাব।।৮
(০৮/০৭/২০২০)
বন্ধু সবাই বাঁচ যদি এ জীবনে ৬০/৭০ টা বছর।
জন্মান্তর রোধে তপস্যায় লেগে যাও কষে কোমর।।
কেবল পাপী পেটের জন্য কখনো দিওনা নজর।
হাঁসি পায় দেখে, বিশৃংখল জীবনের বহর।।১
যৌবনে কোষে নেয় ভবিষ্যৎ,যোগ ভাগ গুণে।।
বিয়ে-শাদি অর্থোপার্জনে ৩০টা বছর হয়ে যায় পার।
সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে, বউছেলে সামলাতে সংসার।২
জীবনে অনেক করেছ সংঘর্ষ নির্যাত আয়াত।।
কুড়িটা বছর কেটে যায় ঘুমিয়ে সকলের জীবন।
সময়তো হয়ে ওঠে না আর করতে আত্মচিন্তন।।৩
রোগ ভোগে কাটলো সময় এবার ওঠার চিতায়।।
দুর্লভ মনুষ্য জীবন দেখতে দেখতে হয়ে গেল পার।
জপ-ধ্যান,ঈশ্বরচিন্তা এ জীবনে হলো না আর।।৪
সেই যোনি তুমি প্রাপ্ত হবে নিশ্চয় পুনর্বার।।
অন্তত: দিনে একটা ঘন্টা ক্রিয়া করো শান্ত হয়ে।
সবসময় আর থাকতে হবে না তোমায় ভয়ে ভয়ে।।৫
দেখবে অনায়াসে ঈশ্বর খুলে দেবেন মুক্তির দ্বার।।
নিয়মিত সাধনায় হবে তুমি নির্মম নিরহংকার।
চিন্তা যাবে দূরে, থাকবে না সম্ভাবনা জন্মাবার।।৬
শাস্ত্রানুসারে চললে, মিলে যাবে জীবনের অংক।।
(০৭/০৭/২০২০)
রক্ষা করো হে জনার্দন।
আর্তের প্রার্থনা শুনে ভক্তের প্রমাদ গুনে।
আবির্ভাব হও বিপদভঞ্জন।।১
কৃষ্ণ ভগবানে করি অঙ্গী।
পুনর্জন্ম বড় বিপদ, এড়াতে ধরি তব পদ,
তুমি যে আমার সহায় সম্পদ।।২
সে ভুগছে কর্ম ফল তার।
মোহের রঙিন চশমা পড়ে দেখে রঙিন সংসার।
সবাই তো নয় শঙ্করাচার্য, বলবে মিথ্যা সংসার।।৩
জ্ঞানী বলে সে সুখ নয়,সুখের আভাস বলে তারে।।
দুধের জল বের করে ঘী পনিরের করে ব্যাপার।
বিবেক হলে অপার বুঝবে দেহ মধ্যে দেহী সার।।৪
তাই আদি ব্যাধিতে ভুগতে হয় বারবার।
যখনই মিটে যাবে নাম রূপ আর উপাধি।
সংযম সাধনায় যদি হয় তোমার সমাধি।।৫
এ দেহ আবরণ মাত্র চৈতন্য সত্তাই সার।।
আমি নই ক্ষুদ্র,ব্যাপ্ত আমি অখন্ড মন্ডলাকার।
দেখবে তখন মনে আসছে না কোন বিকার।।
আত্মা তে হলে স্থিত নিজেই করবে স্বীকার।
দেহ আমি নই দেহ আমার, এটা করো বিচার।।৭
জ্ঞান বিনা দুঃখ জীবন থেকে নাই যাবার।।
যোগের কৌশল জানলে থাকবে না অন্ধকারে।
ঈশ্বর সে ক্ষমতা দিয়েছেন তোমারে আমারে।।৮
ভাগ্যের লিখন করেছ নিজেই,, হাতে ধরে কলম মসি।।৯
**হরি ওম তৎ সৎ**
০৬/০৭/২০২০/
গুরু তোমার চরণ ধরে,
তুমি করবে আমায় পার। ১
আমি অসহায় সম্বলহীন,
জেন প্রভু আমি অতিদীন,
দেখাবে যে মুক্তির দ্বার।২
মর্তলোকে দেখিবেশি কষ্ট,
করো না মোরে যোগভ্রষ্ট,
ত্রিতাপ জ্বালা সহেনা আর। ৩
কখনো আম্ফান,
অহরহ আসে সমাচার।৪
কত যে দেখালে,
এই মায়াময় সংসার। ৫
শুনেছি অনেকবার,
কেউ সঙ্গে নয় যাবার। ৬
মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে,
ধরো হাত মোর শক্ত করে,
আসতে না হয় যেন বারবার।৭
কান্না শুরু জন্মের সঙ্গে,
জন্ম রোধ হবে মোহভঙ্গে,
আর জন্ম হবে কতবার। ৮
বৈরাগ্য যেন হয় তীব্র,
জ্ঞান হোক অতি শীঘ্র,
বোঝাও স্বরূপ মায়ার।৯
কাঞ্চনকামিনীর মোহে,
ভাসছে সব সংসার প্রবাহে,
বোঝেনা সংসারের সার। ১০
পেলাম যখন গুরু,
তুমি ছাড়া গতি নাই আর।১১
এখনো রয়েছি মূলাধারে ,
পৌঁছাও মোরে সহস্রারে,
সেখানে পাই আনন্দ অপার।
সেইতো আমার অন্তিম দ্বার।।১২
স্বামী নিত্যানন্দ বলে বারবার,
আর কি ইচ্ছা আছে জন্মাবার?
।।হরি ওম্ তৎসৎ।।
স্বানুভূতি
০৫/০৭/২০২০।
আজ গুরু পূর্ণিমা ( গুরু সঙ্গের অনুভব)
শ্রীগুরবে নমঃ। শ্রী পরম গুরবে নমঃ।
শ্রীগুরু চরণে জানাই মোর প্রণাম শুভদিনে।
আছো সাথে মোর তবু কাটেনা তব স্মরণ বিনে।।
গুরু দিলেন বুদ্ধি মোরে তিনি-ই পরম গতি।
ভ্রমিতেরে দেখালেন পথ দিয়ে পরম জ্যোতি।।১
চারটি বছর গুরু সেবার সুযোগ পেয়ে হয়েছি ধন্য।
পূর্বজন্মের কর্মফলে সেটাই অর্জন আমার পূণ্য।।
প্রারম্ভে গুরুর কাছে যা পেয়েছিলাম শিক্ষা।
সবকিছুই দিয়েছেন ভরে না চাইতেও ভিক্ষা।।২
গুরু ছিলেন অল্পভাষী বলতেন অত্যন্ত ধীরে ।
সকাল-সন্ধ্যায় করতেন ক্রিয়া নির্দিষ্ট কুটিরে।।
আজ এই সংস্কার সবি গুরুর দেওয়া।
চোখ কান ছিল খোলা নিয়েছি যেটুকু নেওয়া।।৩
গুরু মোর কল্পতরু কোন কিছুর হয়নি অভাব।
সব সময় আছেন সঙ্গে দেখেছি গুরুর প্রভাব।।
ভ্রমণ করেছিলাম পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণে।
কখনো ভুলি নাই জাগরণে কিংবা স্বপনে শয়নে।।৪
অনাথ আমি হয়ে গেলাম গুরুর মহাপ্রয়াণে।
তিনি রেখেছেন মোরে সদাই তার নয়নে নয়নে।।
গুরুর নামে হয়েছে প্রতিষ্ঠা চারটি আশ্রম।
তিনি করেছেন আশীর্বাদ করতে কঠোর পরিশ্রম।।৫
সে আশ্রমে করবে সাধনা হয়ে আশ্রমবাসী।
জাত ধর্মের বিচার নাই হলে ব্রহ্মচারী সন্ন্যাসী।।
গুরুই পরম দেবতা গুরু ছাড়া শ্রেষ্ঠ কেহ নাই।
নিত্যানন্দ বলে গুরু শ্রেষ্ঠ সম্পদ,গুরুশরণ চাই।৫।
গুরুর দেওয়া ক্রিয়া আজ যে করবে শুভক্ষণে।
থাকবে ভালো গুরু কৃপায় সে নিশ্চয় আগামী দিনে।
সূর্য যেমন থাকে দূরে, প্রকাশ পায় সবাই সকালে।
গুরুদেবও থাকলে দূরে তার আশীর্বাদ পাবে সকলে
গুরু কৃপাহি কেবলম্।গুরু কৃপাহি কেবলম্।
( ওম্ শান্তি:শান্তি: শান্তি:)
ছিলনা তাই নানা ভাবেরপ্রকৃতির রঙ্গ।
ছিলনা কো জন্ম মৃত্যু দুঃখ সুখের কথা,
ছিল না শোক তাপ অশান্তির বারতা।
জন্ম-মৃত্যুর সৃষ্টি হ’ল জগতের পরে।
শোক তাপ হাসি কান্নার নিত্য পরিচয়,
শুরু হলো জীবনের নিত্য নিত্য ক্ষয়।
দৃষ্টি ভঙ্গীর নানাভাবে মানুষ হয় ভ্রান্ত।
বেদান্ত বলেছে পথ জগত লীলা মানি,
বিদ্যা অবিদ্যার মাঝে রাখো দৃষ্টি খানি।